চীনের বিনিয়োগ ও সহযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে
২২ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০৪ এএম

ইনকিলাবে প্রকাশিত খবর মোতাবেক, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে চীনা কোম্পানিগুলোর চুক্তি বাতিল করা হয়েছে এবং বকেয়া বিল দেয়া বন্ধ রাখা হয়েছে। পক্ষান্তরে রেন্টাল, কুইক রেন্টাল ও ভারতের আদানির বিদ্যুৎ কেন্দ্র সচল রয়েছে। তাদের বকেয়া পরিশোধও অব্যাহত আছে। এই বিষম নীতি বা বৈপরীত্য কেন, স্বভাবতই সে প্রশড়ব উঠে। ওই খবরেই উল্লেখ করা হয়েছে, দিল্লির অনুগত আমলারা এটা করেছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, স্বৈরাচার বিদায় নিলেও তার দোসর, নিয়োগকৃত বা নিয়োজিত আমলারা অনেকেই অন্যান্য খাতের মতো জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতেও বহাল রয়েছে। প্রশাসন, পুলিশ, বিভিনড়ব সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানে আওয়ামী আমলারা সক্রিয় ও তৎপর। কিছু কিছু ক্ষেত্রে পরিবর্তন যা হয়েছে, দেখা গেছে, সেই পরিবর্তনের মধ্যেও আওয়ামী আমলারা প্রাধান্য পেয়েছে। খবর বেরিয়েছে, পুলিশের উচ্চপদে যাদের পদায়ন করা হয়েছে, তাদের বেশির ভাগই আওয়ামী-অনুগত। বাস্তবতা যদি এই হয়, তবে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে যা হয়েছে অন্যান্য খাতেও তা হতে বাধ্য। নজিরবিহীন গণঅভ্যুত্থানের পর আশা করা গিয়েছিল সর্বক্ষেত্র থেকে আওয়ামী আমলা ও কর্মকর্তাদের সরিয়ে দিয়ে তাদের শূন্য স্থানগুলোতে এমন আমলা-কর্মকর্তাদের নিয়োগ বা পদায়ন করা হবে যারা সৎ, দক্ষ এবং গণঅভ্যুত্থানের প্রত্যাশা বাস্তবায়নে সক্ষম। সরকার সেটা করতে পারেনি। সে কারণে পদে পদে তাকে বাধাগ্রস্ত হতে হচ্ছে, বিপাক-বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে। তাদের দুরাচার, বাধা ও প্রতিবন্ধকতা থেকে যদি সরকারকে রেহাই পেতে হয়, তাহলে সকল ক্ষেত্র থেকে আওয়ামী অনুগত ও সুবিধাভোগী কর্মকর্তাদের সরিয়ে দেয়া ও নি®িঙঊয় করার বিকল্প নেই। জ্বালানি ও বিদ্যুৎ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা তার যোগ্যতা ও পারঙ্গমতার পরিচয় খুব কমই দিতে পেরেছেন বা পারছেন। কীভাবে চীনা কোম্পানিগুলোর চুক্তি বাতিল হলো, কীভাবে তাদের বকেয়া পরিশোধ বন্ধ হয়ে গেলো তার কৈফিয়ত তিনি এড়িয়ে যেতে পারবেন না। মন্ত্রণালয়ের কারা এ সিদ্ধান্ত গ্রহণে মূল ভূমিকা রেখেছে, তাদের খুঁজে বের করতে হবে। জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর চুক্তি বাতিল এবং বকেয়া বন্ধের সিদ্ধান্তের আগে তাদের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত ছিল। তাদের সঙ্গে একটা সমঝোতায় উপনীত হওয়া সঙ্গত ছিল। এ সিদ্ধান্ত চীনা বিনিয়োগপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে যে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে, সেটা বলাই বাহুল্য।
জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত পতিত স্বৈরাচার ও তার অলিগার্কদের লুটপাটের মৃগয়া ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছেল। এই খাত থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট, ভাগ-বাটোয়ারা ও পাচার হয়েছে। পতিত স্বৈরাচার ঋণের জালে আটকে গেছে এ খাতকে। সেই ঋণ শোধ করতে এখন হিমশিম খেতে হচ্ছে। স্বয়ং উপদেষ্টা জানিয়েছেন, অন্তর্বর্তী সরকার যখন ক্ষমতা গ্রহণ করে তখন এখাতে মোট বৈদেশিক দেনা ছিল ৩ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার; এখন তা ৮২৯ মিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। এ বছরের মধ্যে এ ঋণ পরিশোধের পরিকল্পনা আছে। জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. বদরুল ইমামের মতে, বকেয়ার কারণে বড় ধরনের বিপাকে পড়েছে জ্বালনি খাত। অনেকেরই মনে থাকার কথা, বকেয়া পাওনার জন্য আদানি বিদ্যুৎ সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছিল। জরুরিভিত্তিতে তার পাওনা পরিশোধের ব্যবস্থা হওয়ায় সরবরাহ স্বাভাবিক হয়। ওদিকে রামপাল, এস আলম মাতার বাড়িসহ অন্যান্য কেন্দ্রের বকেয়াও মোটা অংকের, যা পরিশোধ করা হচ্ছে পর্যায়μমে। রমজানে ও পরে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিরবচ্ছিনড়ব থাকায় জনমনে সন্তোষ বিরাজ করলেও তার জন্য যথেষ্ট মূল্য দিতে হয়েছে ও হচ্ছে। উচ্চমূল্যে রেন্টাল, কুইক রেন্টালের বিদ্যুৎ কিনতে হচ্ছে। বিপুল গ্যাস আমদানি করে গ্যাসচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন চালু রাখতে হচ্ছে। এখানে মনে রাখা আবশ্যক যে, পতিত স্বৈরাচারের অনুগত ব্যবসায়ীরা রেন্টাল-কুইক রেন্টালের মালিক। গ্যাস আমদানির ক্ষেত্রেও তাদেরই প্রাধান্য রয়েছে। ব্যবসায়ীরা অতীতের মতো এখনও ঘি-মাখন খেয়ে মোটা-তাজা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, তারা বকেয়া বিল পেয়ে এবং এখনও বিদ্যুৎ ও গ্যাস বেচে যে বিপুল অংকের অর্থ হস্তগত করছে, তার অংশ বিশেষ আওয়ামী নেতাকর্মীদের রাজপথে নামার কর্মসূচিতে ব্যয় করছে বলে ইনকিলাবের খবরে উল্লেখ করা হয়েছে। স্বৈরাচারের অলিগার্কদের পৃষ্ঠপোষকতা বা রিফুয়েলিং অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য কতবড় আত্মঘাতী হচ্ছে, সেটা সহজেই অনুমেয়। জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত থেকে চুরি-চামারি ও লুটপাট হয়েছে বল্গাহীনভাবে। চুরি হয়েছে অন্তত ৬০০ কোটি ডলার। এর মধ্যে নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ দিতে কমিশন হিসাবে লুটপাট হয়েছে ৩০০ কোটি ডলার আর বিদ্যুৎকেন্দ্র না চালিয়ে কেন্দ্রভাড়া ও অতিরিক্ত মুনাফা হিসাবে বেসরকারি খাত পেয়েছে ৩০০ কোটি ডলার। দুঃখজনক হলেও বলতে হচ্ছে, স্বৈরাচারের আমলে বিদ্যুতে দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে বলে দাবি করা হলেও বিদ্যুতের সরবরাহ কখনই নিরবচ্ছিনড়ব হয়নি। যথেচ্ছা লোডশেডিং হয়েছে। দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। গ্রাহকদের বাধ্য হয়ে বাড়তি দাম গুণতে হয়েছে। লক্ষ করার বিষয়, বিপুল বিনিয়োগ বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে বটে, কিন্তু সেই বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়নি। ফলে সক্ষমতা কাজে লাগানো যায়নি। উল্টো আর্থিক খেসারত দিতে হয়েছে।
পতিত সরকারের আমলে যে সব খাতে সবচেয়ে বেশি অনিয়ম, দুর্নীতি, চুরি ও লুটপাট হয়েছে, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত তার একটি। অন্তর্বর্তী সরকারের সাড়ে আট মাস পার হয়ে গেছে। এই সময়ের মধ্যে এসবের অবসান হবে, এমন আশা করা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু তা হয়নি। উল্টো দেখা যাচ্ছে, আওয়ামী আমলারা ছড়ি ঘুরাচ্ছে আর স্বৈরাচারের অলিগার্কেরা আরো শক্তভাবে জেঁকে বসছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আগামীতে অর্থনীতি গভীর সঙ্কটে পতিত হবে। সেই সঙ্কট মোকাবিলার জন্য বিনিয়োগের বিকল্প নেই। সরকার বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য চেষ্টা করছে। বিনিয়োগ সম্মেলনও একটি করেছে। সরকারের উদ্যোগ-পদক্ষেপের ফল খুব আশাব্যাঞ্জক বলে প্রতীয়মান হচ্ছে না। আশ্বাস আছে, বাস্তবায়নের উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। উপদেষ্টারা কাজের চেয়ে লেকচার দিতে আগ্রহী। তারা লম্বা লম্বা বয়ান দিচ্ছেন। স্বপেড়বর ফানুস উড়াচ্ছেন। এতে কোনো কাজ হবে না। যদি হতো হাসিনাকে বিদায় নিতে হতো না। তাই যে করেই বিনিয়োগ আনতে হবে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের চীন সফর ছিল যে কোনো বিবেচনায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় অনেক বিষয়েই কথা হয়েছে। বিনিয়োগ ও বিভিনড়ব ক্ষেত্রে আরো সহযোগিতা নিয়ে যে আলোচনা হয়েছে, তা ইতিবাচক। প্রশড়ব হলো, চীনা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে এবং পাওনা ঝুলিয়ে রেখে কি বর্ধিত বিনিয়োগ ও যথাযথ সহযোগিতা পাওয়া যাবে? চীনা ব্যবসায়ীদের একটা বড় দল বাংলাদেশ সফরে আসবে। আমাদের আচরণ ও পদক্ষেপ কি তাদের এ দেশে বিনিয়োগ ও ব্যবসাবিকাশে উৎসাহিত করবে? অন্তর্বর্তী সরকারের ভারতমুখিতা ইতোমধ্যে প্রশেড়বর জন্ম দিয়েছে। ভারত আমাদের ভিসা আটকেছে, রফতানি সীমিত করেছে, ট্রান্সশিপমেন্টের সুবিধা বাতিল করেছে, সেভেন সিস্টার্সমুখী রেলপ্রকল্প স্থগিত করেছে। এই সরকারের আমলে তার ও বাংলাদেশ বিরোধী কী করেনি ভারত? তারপরও ভারতের পুচ্ছ ধরার প্রবণতা কেন? তিস্তা প্রকল্পের ব্যাপারে চীনের সহযোগিতা করার আন্তরিক আগ্রহের কথা আমরা জানি। প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরের সময়েও এ নিয়ে কথা হয়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ ভারত পানি না দিলে তিস্তা প্রকল্প কতটা সফল হবে তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। প্রশড়ব হলো, ভারত যদি পানি দেয়ই তাহলে তো তিস্তা প্রকল্পের প্রয়োজনই নেই। ভারত পানি দেবে না, এটা ধরে নিয়েই এ প্রকল্প নেয়া হয়েছে বা হবে। এ রকম ভারততোষী বক্তব্য তার কাছে থেকে কেউ আশা করে না। তাহলে তার ও হাসিনার বক্তব্যের মধ্যে পার্থক্য থাকলো কোথায়? পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, চীন বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু। এখানে তার বিনিয়োগ ও সহযোগিতা অর্থনীতির উনড়বয়ন ও বিকাশে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করতে পারে। এটা মাথায় রেখে তার সঙ্গে প্রশড়বাতীত সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। সরকার এ ব্যাপারে যথার্থ দূরদৃষ্টির পরিচয় দেবে, এটাই আমরা প্রত্যাশা করি।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

কাশ্মীর হামলার গোপন নথি ফাঁস! সরাসরি জড়িত ভারত, কি বলছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম?

গাজা সাংবাদিকদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক স্থান: আরএসএফ

বাংলাদেশ সীমান্তে ভারতীয় নিরাপত্তা জোরদার, শুরু যৌথ টহল

মোদির কাশ্মীর ষড়যন্ত্র প্রকাশ করলো আল-জাজিরা

মহেশপুর সীমান্তে আবারো বিএসএফের গুলিতে এক বাংলাদেশী আহত

আনোয়ারায় সিইউএফএল বাজারে আগুন, পুড়ল দুই দোকান

আড়াইহাজারে ডাকাতি, টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট

এরদোয়ানকে অপমানের অভিযোগে সুইডিশ সাংবাদিকের ১১ মাস কারাদণ্ড

সোমবার দেশে ফিরবেন খালেদা জিয়া

জেনেভা আলোচনায় সাইপ্রাসে নতুন সমাধানের ইঙ্গিত

বনানীতে বেপরোয়া গাড়ির চাপায় প্রাণ গেল পথচারীর

শরীর থেকে পুরো বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া হাত অবিশ্বাস্যভাবে জোড়া লাগালো চীনের চিকিৎসকরা!

আমিরাতের শাসক পরিবারের সঙ্গে ট্রাম্পের ক্রিপ্টো ফার্মের চুক্তি চূড়ান্ত

ফাঁস হয়েছে শুটিং দৃশ্য, স্যোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল 'তান্ডব'

উখিয়ায় হঠাৎ বেড়েছে খুনখারাবি: এপ্রিলে খুন ও অস্বাভাবিক মৃত্যু ১৫

গাজায় নতুন করে ৪ লাখ ২৩০০০ হাজার ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত

গাজার যুদ্ধাহত দুই শিশু চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে পৌঁছেছে

যুক্তরাষ্ট্র-ইরান পরমাণু আলোচনা স্থগিত

রাজস্থানকে বিদায় করে শীর্ষে মুম্বাই

উত্তরায় হোটেলে অসামাজিক কার্যকলাপ, একাধিক তরুণী আটক